চট্টগ্রাম ০৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের নাগপুরে ভয়াবহ সহিংসতা, কারফিউ জারি

Listen to this article

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পাথর ছোড়াছুড়ি থেকে শুরু করে দোকান ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করেছে। পরবর্তী সময়ে প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নাগপুর শহরের মহাল এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের দিকেও ব্যাপক পাথর ছোড়া হয়। প্রাথমিকভাবে ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন পুলিশ অফিসার আহত হন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।

এরপরে কোতোয়ালি আর গণেশপেঠ এলাকাতেও সংঘর্ষ ছড়ায়। হাজার খানেক মানুষ ব্যাপকভাবে পাথর ছোড়া, ভাঙচুর চালায়। দোকানপাট আর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। মঙ্গলবার প্রায় ভোররাত পর্যন্ত পুলিশ নানা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে ২০ জনকে আটক করেছিল।

বেলা ১০টা নাগাদ মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী যোগেশ কদম সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, সহিংসতার কারণ এখনও খুঁজে বের করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও কারফিউ জারি আছে সেখানে। যে অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়েছিল, সেই মহাল অঞ্চল ছাড়া শহরের অন্যান্য এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিকই আছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন। তবে পুলিশ নাগরিকদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে যাতে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে না বের হন।

যেসব এলাকায় সোমবার রাত থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে, সেটি হিন্দু পুণরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল কার্যালয়ের একেবারেই কাছে। আবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বাড়িও নাগপুরেই।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
সোমবার দুপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় একটি বিক্ষোভ জমায়েত করে। ওই বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলায় অবস্থিত খুলদাবাদ থেকে আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়- যাতে মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। পরে এই এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগও পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়।

নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, একটি গুজবের ফলেই সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত।

কিছু ভুল তথ্যের ফলেই এই ঘটনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সবার কাছেই আবেদন যে ঘর থেকে বের হবেন না, পাথর ছুড়বেন না। গুজবে বিশ্বাস করবেন না, বলেন চন্দক।

আবার নাগপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরিও বলছেন যে গুজব থেকেই এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে।

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি জানিয়েছেন, কিছু গুজবের কারণেই নাগপুরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় শান্তি বজায় রাখাটাই শহরের ঐতিহ্য। আমি সবার কাছে আবেদন করব যে কেউ কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না, শান্তি বজায় রাখুন।

এআইএমআইএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ওয়ারিস পাঠানের কথায়, নাগপুরে অগ্নিসংযোগ ও পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা হয়েছে। আমরা এ ধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রত্যেকের উচিত কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা। কিন্তু এই ঘটনা হলো কীভাবে? প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক এর পিছনে কী কারণ ছিল।

ভারতের নাগপুরে ভয়াবহ সহিংসতা, কারফিউ জারি

আপডেট সময় ১২:২৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
Listen to this article

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পাথর ছোড়াছুড়ি থেকে শুরু করে দোকান ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করেছে। পরবর্তী সময়ে প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নাগপুর শহরের মহাল এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের দিকেও ব্যাপক পাথর ছোড়া হয়। প্রাথমিকভাবে ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন পুলিশ অফিসার আহত হন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।

এরপরে কোতোয়ালি আর গণেশপেঠ এলাকাতেও সংঘর্ষ ছড়ায়। হাজার খানেক মানুষ ব্যাপকভাবে পাথর ছোড়া, ভাঙচুর চালায়। দোকানপাট আর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। মঙ্গলবার প্রায় ভোররাত পর্যন্ত পুলিশ নানা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে ২০ জনকে আটক করেছিল।

বেলা ১০টা নাগাদ মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী যোগেশ কদম সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, সহিংসতার কারণ এখনও খুঁজে বের করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও কারফিউ জারি আছে সেখানে। যে অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়েছিল, সেই মহাল অঞ্চল ছাড়া শহরের অন্যান্য এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিকই আছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন। তবে পুলিশ নাগরিকদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে যাতে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে না বের হন।

যেসব এলাকায় সোমবার রাত থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে, সেটি হিন্দু পুণরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল কার্যালয়ের একেবারেই কাছে। আবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বাড়িও নাগপুরেই।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
সোমবার দুপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় একটি বিক্ষোভ জমায়েত করে। ওই বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলায় অবস্থিত খুলদাবাদ থেকে আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়- যাতে মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। পরে এই এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগও পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়।

নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, একটি গুজবের ফলেই সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত।

কিছু ভুল তথ্যের ফলেই এই ঘটনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সবার কাছেই আবেদন যে ঘর থেকে বের হবেন না, পাথর ছুড়বেন না। গুজবে বিশ্বাস করবেন না, বলেন চন্দক।

আবার নাগপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরিও বলছেন যে গুজব থেকেই এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে।

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি জানিয়েছেন, কিছু গুজবের কারণেই নাগপুরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় শান্তি বজায় রাখাটাই শহরের ঐতিহ্য। আমি সবার কাছে আবেদন করব যে কেউ কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না, শান্তি বজায় রাখুন।

এআইএমআইএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ওয়ারিস পাঠানের কথায়, নাগপুরে অগ্নিসংযোগ ও পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা হয়েছে। আমরা এ ধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রত্যেকের উচিত কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা। কিন্তু এই ঘটনা হলো কীভাবে? প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক এর পিছনে কী কারণ ছিল।