চট্টগ্রাম ০৬:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’ ৭ দিনের রিমান্ডে

Listen to this article

চট্টগ্রাম নগরীর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। নগরীর বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ।

রোববার (১৬ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর ছিদ্দিকের আদালতে পুলিশ তাকে হাজির করলে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স থেকে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি টিম। পরে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা ও সিএমপি’র বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে নগরীর চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’

সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাজ্জাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে খোদ পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়।

২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর বিকেলে চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় তাহসিন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে কালো রঙের একটি গাড়িতে আসা লোকজন। ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে।

এছাড়া গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কালারপোল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন সাজ্জাদ। ওই ঘটনার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ৪ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ২৮ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসিকে হুমকি দেয় সাজ্জাদ। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ হোসেন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এদিকে আজ রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে। তিনি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চট্টগ্রামে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন।

ছোট সাজ্জাদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, সে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারি, বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী আসামি। সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার আলোচিত ডাবল মার্ডার, চান্দগাঁও থানারও একটি খুনের মামলার আসামি সে। বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও মোহরা কেন্দ্রিক যে সব ঝুট ব্যবসা সেটার নিয়ন্ত্রণ করতো সে।’

হাসিব আজিজ বলেন, ‘আমাদের সিএমপি’র উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম একটি ট্রেনিং কোর্সে সাতদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের দেওয়া তথ্যে তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ তার স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার (১৫ মার্চ) রাত আটটার দিকে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে গিয়েছে। সিএমপি’র একটি টিম আগে থেকেই ঢাকায় ছিল। তথ্য পেয়ে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। স্থানীয়রাও সাহায্য করেছে তাকে ধরতে। এরপর তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।

শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’ ৭ দিনের রিমান্ডে

আপডেট সময় ০২:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
Listen to this article

চট্টগ্রাম নগরীর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। নগরীর বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ।

রোববার (১৬ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর ছিদ্দিকের আদালতে পুলিশ তাকে হাজির করলে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স থেকে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি টিম। পরে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা ও সিএমপি’র বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে নগরীর চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’

সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাজ্জাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে খোদ পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়।

২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর বিকেলে চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় তাহসিন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে কালো রঙের একটি গাড়িতে আসা লোকজন। ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে।

এছাড়া গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কালারপোল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন সাজ্জাদ। ওই ঘটনার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ৪ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ২৮ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসিকে হুমকি দেয় সাজ্জাদ। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ হোসেন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এদিকে আজ রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে। তিনি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চট্টগ্রামে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন।

ছোট সাজ্জাদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, সে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারি, বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী আসামি। সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার আলোচিত ডাবল মার্ডার, চান্দগাঁও থানারও একটি খুনের মামলার আসামি সে। বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও মোহরা কেন্দ্রিক যে সব ঝুট ব্যবসা সেটার নিয়ন্ত্রণ করতো সে।’

হাসিব আজিজ বলেন, ‘আমাদের সিএমপি’র উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম একটি ট্রেনিং কোর্সে সাতদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের দেওয়া তথ্যে তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ তার স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার (১৫ মার্চ) রাত আটটার দিকে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে গিয়েছে। সিএমপি’র একটি টিম আগে থেকেই ঢাকায় ছিল। তথ্য পেয়ে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। স্থানীয়রাও সাহায্য করেছে তাকে ধরতে। এরপর তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।